| |

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফিলিস্তিনের উপর ইজরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে জনতার সমাবেশ

১২ এপ্রিল ২০২৫ একটি ঐতিহাসিক দিন এদেশের ইতিহাসে। দলমত ভুলে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, আলেম, রাজনীতিবিদ, ইমাম, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, দিনমজুর, ছাত্র-জনতা সকলে একত্রিত হয়েছিলো মজলুমের পক্ষে, নিজেদের অস্তিত্বের পক্ষে, আলেম-উলামাদের নেতৃত্ব মেনে। এ দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর দ্বিতীয়টি নেই।

আমি বিষয়টিকে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই। এই যে এত লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন জেলা থেকে, রোদের মধ্যে কষ্ট করে, নিজের পয়সায় ঢাকায় সমবেত হলো মাত্র ঘন্টাখানেকের একটা সমাবেশে। যাদের নেতৃত্ব মেনে এত মানুষ জমায়েত হলো এই নেতৃত্ব এদেশে নতুন জন্ম হয় নাই। কিন্তু এই নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখি না। অন্যের উপর জুলুমের সময় তো নয়ই, নিজের উপর জুলুম হলেও তাঁদেরকে আমরা চুপ থাকতেই দেখেছি।

উনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, ছিলেন যাদের নামে পূর্বে নানানরকম মিথ্যা মামলা, জুলুম, নির্যাতন চলেছে। তারা নেতৃত্বের এই সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কখনোই দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেন নাই। যদিও দেশদ্রোহী, জঙ্গী ইত্যাদি নানান বিশেষণে তাদেরকে বিশেষায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এমনকি সমাবেশের আগেরদিন থেকে প্রচার করা হচ্ছিলো এই সমাবেশে সন্ত্রাসী, জংগীরা গোপনে যোগ দিবে। দেশ রসাতলে যাবে, আমরা উগ্রবাদী তকমা পাবো ইত্যাদি। অথচ ছোটখাটো একটা ঝামেলাও হয় নাই। যেরমকটা এদেশে ৫০০ লোকের একটা রাজনৈতিক সমাবেশেই হয়ে থাকে।

যাইহোক, যে নেতৃত্ব জেগে উঠেছে, যে নেতৃত্বের ডাকে সাধারণ জনতার এমন অভূতপূর্ব সাড়া, তারা সকলেই যেন এখন থেকে জাগ্রত থাকে সেই দোয়া করি। সামনের সময়টা আমাদের জন্য খুব কঠিন হতে যাচ্ছে। এবং সামনের সেই সময় কোন দূর ভবিষ্যত না, বরং দৃষ্যমান। হঠাৎ একদিন সকালে উঠে দেখবেন চেনা পরিচিত সবকিছুই আগুনে জ্বলছে। জাগ্রত জনতার এই স্প্রিট সেদিনের জন্য যেন সতেজ থাকে সেই দোয়া করি।

দেশে যখন এই সমাবেশ চলে, তার কিছুদিন আগে পাশের দেশ ভারতে মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের নিমিত্তে আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছিলো। সামবেশের দিনও ইন্টারনেট বন্ধ করে প্রতিবাদী জনতার উপর ওপেন ফায়ার করা হয়।

এই সমাবেশ থেকে সেই হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের ব্যাপারে বলা হয়। পার্সপোর্টে “Except Israil” শব্দ ফিরিয়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় যা কিছুদিন আগে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার কর্তৃক বাদ দেয়া হয়। এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনে জনগণের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশি হিসেবে আমার, আমাদের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, মজলুমের উপর জলুম আমরা হাস্যরসের সাথে উপভোগ করিনি। হয়তো যা করার দরকার ছিলো তা করতে পারিনি। কিন্তু তারপরও প্রতিবাদটা চালু রেখেছি। ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ, বিশ্ব মানবতা জিন্দাবাদ। জায়নবাদ, হিন্দুত্ববাদ নিপাত যাক। মানবতা মুক্তি পাক।

Leave a Reply